ইসলামী ব্যাংকগুলির
সুদের ব্যবসার মারাত্মক
অপকৌশল
আজ রাতের
লেকচারে আমি (সুদ
লেনদেনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
বিষয়ে) একটি বিস্তারিত
চিত্র তুলে ধরেছি ।
প্রথমে এই বিষয়ের
সামগ্রিক চিত্র নিয়ে
অধ্যয়ন করুন এবং
তারপর বুঝার চেষ্টা
করুন আল্লাহ আমাদেরকে
কি করিতে দেখিতে
চান এবং (সুদের
প্রতি) তাঁহার ক্রোধ
কত প্রচণ্ড । (ব্যাংকের
সহায়তা এবং সুদ
লেনদেন ছাড়া) অস্ট্রেলিয়ার
সিডনীতে আমি কিভাবে
একটি বাড়ি ক্রয়
করিব এই প্রশ্ন
আমাকে করবার পূর্বে ।আমাকে
আরেকটি পয়েন্ট উল্লেখ
করতে দেন । (ইহুদী-খ্রীষ্টান) যারা
আমাদের (ঈমান-আমলের) উপর
আক্রমণ করতেছে প্রতারনায়
তাদের ডক্টরেট ডিগ্রী
আছে । যদি দশজন
মুসলমান থাকে তবে
তাদের মধ্যে ছয়জন
সুদে ব্যাংক ঋণ
নিয়ে বাড়ি ক্রয়
করবে, গাড়ি ক্রয়
করবে অথবা ইসলামী
স্কুল প্রতিষ্টা করবে ।
কিন্তু অবশিষ্ট চারজন
সুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে তোলে, সুদ
লেনদেনে জড়িত হয় না
। কিন্তু
তারা এই ছয়জনকে
নিয়ে সন্তুষ্ট নয়,
বাকী চারজনকেও চাই । “ইহুদি ও
খ্রিস্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হইবে না, যে পযর্ন্ত না আপনি তাহাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। (আল কোরআন ঃ ২:১২০)”
কিন্তু তাদেরকে
কিভাবে আনা সম্ভব,
তারা তো আল্লাহ-আল্লাহর রাসুলের (সাঃ)
হুকুম অমান্য করতে
রাজী নয় ।
তারও একটি
উপায় আছে....তথাকথিত ইসলামী
ব্যাংক !!! হ্যাঁ, ইসলামী ব্যাংক......হা-হা-হা.....
আর এই
কাজটিই ইসলামী ব্যাংকগুলি
করতেছে । আমার লেকচার
শেষ করার পূর্বে
এই সম্পর্কে কিছু
বলতে হবে । তথাকথিত
ইসলামী ব্যাংকগুলি যত
দেনদেন করে তার
শতকরা ৯০ ভাগই
পেছনের দরজার সুদ । একটি উদাহরন
দেই, বলা যায়
ইসলামী ব্যাংকগুলি বেশীর
ভাগ লেনদেনই এভাবে
হয়ে থাকে । ইসলামে
লেনদেন বা ব্যবসা
বলতে বুঝায় নগদ
লেনদেন । পক্ষান্তরে ক্রেডিট
ট্রানজেকশান বা বাকীতে
লেনদেন ইসলামের স্বাভাবিক
নীতির বিরোধী, যাতে
মূল্য বা ঋন
পরিশোধের জন্য সময়
দেওয়া হয় । কাজেই
ইসলামে বাজারমূল্য বলতে
বুঝায় নগদমূল্য । হযরত
ওমর (রাঃ) বাজারে
গিয়ে দেখলেন এক
ব্যক্তি বাজারমূল্যের চাইতে
কমমূল্যে পণ্য বিক্রি
করতেছে । তিনি বললেন,
“দাম বাড়াও না
হয় আমাদের বাজার
থেকে দূর হয়ে
যাও । তুমি কমদামে
পণ্য বিক্রি করতেছে
তোমার প্রতিদ্বন্দীদেরকে ধ্বংস
করার জন্য । তারা
দেউলিয়া হয়ে গেলে
তখন তুমি বাজারের
নিয়ন্ত্রন লাভ করবে
এবং একচেটিয়া ভাবে
দাম বাড়িয়ে মানুষের
গলা কাটবে ।”
কাজেই বাজারমূল্য
হইল নগদমূল্য । একটি
বাড়ি ক্রয় করতে
আমার দরকার দশ
লক্ষ টাকা কিন্তু
এতো টাকা আমার
কাছে নাই ।
ইসলামী ব্যাংক
বলে, কোন সমস্যা
নাই । আমরা এটি দশ
লক্ষ টাকায় ক্রয়
করব এবং আপনার
নিকট চল্লিশ লক্ষ
টাকায় বিক্রি করব ।
কি বললেন ?
আপনার মাথা ঠিক
আছে তো ? কেন দশ লক্ষ
টাকার বাড়ি আমি
আপনার কাছ থেকে চল্লিশ লক্ষ
টাকায় কিনব ? আমি
যদি এমন কাজ
করি আমার ফ্যামিলির
লোকেরা আমাকে মানসিক
রোগের ডাক্তারের কাছে
নিয়ে যাবে ।
এমন কাজ
করলে বুঝতে হবে আমি মানসিকভাবে
অসুস্থ !
আরে না
না না....আপনাকে নগদ
দিতে হবে না........এটা
বাকীতে লেনদেন
ওহ , তাই নাকি ? সুতরাং
আমি চল্লিশ লক্ষ
টাকা পরিশোধ করব.....আর
আপনি তা পরিশোধের
জন্য আমাকে ২০
বছর সময় দিবেন !
কেন
আমি অতিরিক্ত তিরিশ লক্ষ টাকা পরিশোধ করব ? এই প্রশ্নে
একটি উত্তরই সঠিক এবং বাকী সকল উত্তর আবর্জনায় নিক্ষিপ্ত
হওয়ার যোগ্য । আমার অতিরিক্ত তিরিশ লক্ষ টাকা পরিশোধের একটিই কারণ আর তা হলো আপনি আমাকে পরিশোধের জন্য বিশ বছর সময় দিয়েছেন ।
ইহাই একমাত্র কারণ ।
সুতরাং সময়=টাকা । আপনি সময়ের
মাধ্যমে টাকা উপার্জন
করতেছেন আর এটাই সুদ
।
কিন্তু
ইসলামী ব্যাংক বলে, নাহ…এখানে কোন দীর্ঘমেয়াদী লোন নাই….এটা মুরাবাহা ।
মুরাবাহা ? মুরাবাহা
হলো যাতে ক্রেতা
এবং বিক্রিতা বর্দ্ধিত
মূল্যের ব্যাপারে সন্তুষ্ট / একমত থাকে । না, এটা মুরাবাহা নয়, এটা পেছনের
দরজার সুদ । তারা আপনাকে সামনের
দরজা দিয়ে ধরতে পারে
নাই, কাজেই পেছনের
দরজা দিয়ে পাকড়াও
করেছে । বর্তমানে সারাবিশ্বের তথাকথিত
ইসলামী ব্যাংকগুলি মুরাবাহার
মাধ্যমে পণ্য বিক্রি
করতেছে এবং বলতেছে
এটা হালাল । আর একে হালাল বলার মতো মুফতির অভাব নাই
। আপনার যদি একে ভালো মনে হয়, আপনাকে
ঠেকানোর জন্য আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয় নাই । কিন্তু যারা বুঝতে পারেন যে, এটা পেছনের দরজার সুদ, তাদের উচিত একে বর্জন করা । তারপর আরেকটি
বিখ্যাত পদ্ধতি আছে, তা হলো সুদকে গোপন করা
। যাকে
বলা হয় সাদাসিদা
ভাড়া / রেন্টাল / লিজিং চুক্তি এবং তাতে সুদকে কৌশলে ভাড়ার ভিতরে ঢুকিয়ে
দেওয়া হয় । কাজেই নিজেকে
এসব প্রতারনার ফাঁদে পতিত হতে দেওয়া উচিত নয়
। আমরা
যদি এসব করতে থাকি, যদি সুদে ঋণ নেই, সুদে ঋণ দেই, ফিক্সড ডিপোজিটে
টাকা রাখি তবে তার শাস্তি
কি ? এই ব্যাপারে
শেষ একটি হাদিস বলি
। আমাদের উপর তাহার ফলাফল কি হবে
?
এটি একটি সহি হাদিস
। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এদের তাদের চারজনকেই
অভিসম্পাত করিয়াছেন । যে সুদ নেয়, যে সুদ দেয়, যে সুদের দলিল লিখে এবং যে সুদের সাক্ষী থাকে ।
তিনি বলেছেন, তাদের সকলেই সমান অপরাধী
। তারা
যদি সকলেই সমভাবে
অপরাধী হয়, তবে তাদের শাস্তি
কি ? তার শাস্তি
কি যে সুদ খায়
?
কোরআনের সর্বশেষ
অবতীর্ন আয়াতে তার উল্লেখ আছে । তাহারা
জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ
করিবে (আল কোরআন – ২ঃ২৭৫) । কেবল দোযখে যাইবে না, সেখানে অনন্তকাল
বসবাস করবে । সেখানে চিরকাল
অবস্থান করবে (আল কোরআন – ২ঃ২৭৫) । এটি হইল যারা সুদ খায়, তাদের শাস্তি
। কিন্তু
যে সুদ দেয়, তার শাস্তি
কি ? যে বাড়ি ক্রয় করার জন্য সুদে ঋন নিয়েছে ?
আমার লেকচারের পরও তার বোধশক্তি
ফিরে আসে নাই । সে বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে
বলে নাই যে, আমরা একটি মহাপাপ করেছি ।
ইহা থেকে আমাদের
বেরিয়ে আসতেই হবে । আমাদের অবশ্যই
তওবা করতে হবে । বরং তারপরও
সে ব্যাংকের সুদ দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে চেক লিখে যাইতেছে
। নবীজি
(সাঃ) বলেছেন, তার পাপ যে সুদ খায় তার সমান ।
অন্যদিকে তার অবস্থা
কি হবে যে ব্যাংকে চাকরি করে এবং সুদের দলিল লিখে
? তার
অপরাধও তার সমান যে সুদ খায়
। আর
তার অবস্থা কি হবে যে সুদের লেনদেনে
সাক্ষী থাকে ? সেও সমান পাপী যে সুদ খায় তার মতো
। সুতরাং
চারজনের অপরাধ যদি সমান হয়, তবে তাদের শাস্তিও সমান হবে
। তাহারা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করিবে এবং সেখানে
অবস্থান করবে চিরকাল (আল
কোরআন – ২ঃ২৭৫) । পরিশেষে মহান আল্লাহর
নিকট আমাদের প্রার্থনা
তিনি যেন আমাদের
প্রতি দয়ার দৃষ্টি
নিক্ষেপ করেন, যাতে আমরা বিষয়টি অনুধাবন
করতে পারি । তিনি যেন আমাদের
তওবাহ কবুল করেন এবং অতীতের
সকল অপরাধ ক্ষমা করেন
। তিনি যেন আমাদের
প্রতি দয়ার দৃষ্টিতে
তাকান, যাতে আমরা সুদমুক্ত জীবনযাপন
করতে সক্ষম হই । আমিন
!
-মাওলানা ইমরান নযর হোসেন
“ইসলামী ব্যাংকের কলাকৌশল মারাত্মক” লেকচার থেকে নেয়া।
অনুবাদ: ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস
“ইসলামী ব্যাংকের কলাকৌশল মারাত্মক” লেকচার থেকে নেয়া।
অনুবাদ: ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস
No comments:
Post a Comment