Tuesday, September 1, 2015

ইসলামী ব্যাংকগুলির সুদের ব্যবসার মারাত্মক অপকৌশল



ইসলামী  ব্যাংকগুলির  সুদের  ব্যবসার  মারাত্মক  অপকৌশল 
আজ  রাতের  লেকচারে  আমি  (সুদ  লেনদেনে  ইসলামের  দৃষ্টিভঙ্গি  বিষয়ে)  একটি  বিস্তারিত  চিত্র  তুলে  ধরেছি ।  প্রথমে  এই  বিষয়ের  সামগ্রিক  চিত্র  নিয়ে  অধ্যয়ন  করুন  এবং  তারপর  বুঝার  চেষ্টা  করুন  আল্লাহ  আমাদেরকে  কি  করিতে  দেখিতে  চান  এবং  (সুদের  প্রতি)  তাঁহার  ক্রোধ  কত  প্রচণ্ড ।  (ব্যাংকের  সহায়তা  এবং  সুদ  লেনদেন  ছাড়া)  অস্ট্রেলিয়ার  সিডনীতে  আমি  কিভাবে  একটি  বাড়ি  ক্রয়  করিব  এই  প্রশ্ন  আমাকে  করবার  পূর্বে ।আমাকে  আরেকটি  পয়েন্ট  উল্লেখ  করতে  দেন ।  (ইহুদী-খ্রীষ্টান)  যারা  আমাদের  (ঈমান-আমলের)  উপর  আক্রমণ  করতেছে  প্রতারনায়  তাদের  ডক্টরেট  ডিগ্রী  আছে ।  যদি  দশজন  মুসলমান  থাকে  তবে  তাদের  মধ্যে  ছয়জন  সুদে  ব্যাংক  ঋণ  নিয়ে  বাড়ি  ক্রয়  করবে,  গাড়ি  ক্রয়  করবে  অথবা  ইসলামী  স্কুল  প্রতিষ্টা  করবে ।  কিন্তু  অবশিষ্ট  চারজন  সুদের  বিরুদ্ধে  প্রতিরোধ  গড়ে  তোলে,  সুদ  লেনদেনে  জড়িত  হয়  না ।  কিন্তু  তারা  এই  ছয়জনকে  নিয়ে  সন্তুষ্ট  নয়,  বাকী  চারজনকেও  চাই । “ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হইবে না, যে পযর্ন্ত না আপনি তাহাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। (আল কোরআন ঃ ২:১২০)”
কিন্তু  তাদেরকে  কিভাবে  আনা  সম্ভব,  তারা  তো  আল্লাহ-আল্লাহর  রাসুলের (সাঃ)  হুকুম  অমান্য  করতে  রাজী  নয় । 

তারও  একটি  উপায়  আছে....তথাকথিত  ইসলামী  ব্যাংক !!! হ্যাঁ,  ইসলামী  ব্যাংক......হা-হা-হা.....
আর  এই  কাজটিই  ইসলামী  ব্যাংকগুলি  করতেছে ।  আমার  লেকচার  শেষ  করার  পূর্বে  এই  সম্পর্কে  কিছু  বলতে  হবে ।  তথাকথিত  ইসলামী  ব্যাংকগুলি  যত  দেনদেন  করে  তার  শতকরা  ৯০  ভাগই  পেছনের  দরজার  সুদ ।  একটি  ‍উদাহরন  দেই,  বলা  যায়  ইসলামী  ব্যাংকগুলি  বেশীর  ভাগ  লেনদেনই  এভাবে  হয়ে  থাকে ।  ইসলামে  লেনদেন  বা  ব্যবসা  বলতে  বুঝায়  নগদ  লেনদেন ।  পক্ষান্তরে  ক্রেডিট  ট্রানজেকশান  বা  বাকীতে  লেনদেন  ইসলামের  স্বাভাবিক  নীতির  বিরোধী,  যাতে  মূল্য  বা  ঋন  পরিশোধের  জন্য  সময়  দেওয়া  হয় ।  কাজেই  ইসলামে  বাজারমূল্য  বলতে  বুঝায়  নগদমূল্য ।  হযরত  ওমর  (রাঃ)  বাজারে  গিয়ে  দেখলেন  এক  ব্যক্তি  বাজারমূল্যের  চাইতে  কমমূল্যে  পণ্য  বিক্রি  করতেছে ।  তিনি  বললেন,  “দাম  বাড়াও  না  হয়  আমাদের  বাজার  থেকে  দূর  হয়ে  যাও ।  তুমি  কমদামে  ণ্য  বিক্রি  করতেছে  তোমার  প্রতিদ্বন্দীদেরকে  ধ্বংস  করার  জন্য ।  তারা  দেউলিয়া  হয়ে  গেলে  তখন  তুমি  বাজারের  নিয়ন্ত্রন  লাভ  করবে  এবং  একচেটিয়া  ভাবে  দাম  বাড়িয়ে  মানুষের  গলা  কাটবে ।”  কাজেই  বাজারমূল্য  হইল  নগদমূল্য ।  একটি  বাড়ি  ক্রয়  করতে  আমার  দরকার  দশ  লক্ষ  টাকা  কিন্তু  এতো  টাকা  আমার  কাছে  নাই ।
ইসলামী  ব্যাংক  বলে,  কোন  সমস্যা  নাই । আমরা  এটি  দশ  লক্ষ  টাকায়  ক্রয়  করব  এবং  আপনার  নিকট  চল্লিশ  লক্ষ  টাকায়  বিক্রি  করব ।
কি  বললেন ?  আপনার  মাথা  ঠিক  আছে  তো ?  কেন  দশ  লক্ষ  টাকার  বাড়ি  আমি  আপনার  কাছ  থেকে  চল্লিশ  লক্ষ  টাকায়  কিনব ?  আমি  যদি  এমন  কাজ  করি  আমার  ফ্যামিলির  লোকেরা  আমাকে  মানসিক  রোগের  ডাক্তারের  কাছে  নিয়ে  যাবে ।  এমন  কাজ  করলে  বুঝতে  হবে  আমি  মানসিকভাবে  অসুস্থ !
আরে  না  না  না....আপনাকে  নগদ  দিতে  হবে  না........এটা  বাকীতে  লেনদেন
ওহ , তাই  নাকি ?  সুতরাং  আমি  চল্লিশ  লক্ষ  টাকা  পরিশোধ  করব.....আর  আপনি  তা  পরিশোধের  জন্য  আমাকে  ২০  বছর  সময়  দিবেন !
কেন  আমি  অতিরিক্ত  তিরিশ  লক্ষ  টাকা  পরিশোধ  করব ?  এই  প্রশ্নে  একটি  উত্তরই  সঠিক  এবং  বাকী  সকল  উত্তর  আবর্জনায়  নিক্ষিপ্ত  হওয়ার  যোগ্য ।  আমার  অতিরিক্ত  তিরিশ  লক্ষ  টাকা  পরিশোধের  একটিই  কারণ  আর  তা  হলো  আপনি  আমাকে  পরিশোধের  জন্য  বিশ  বছর  সময়  দিয়েছেন ।  ইহাই  একমাত্র  কারণ ।  সুতরাং  সময়=টাকা ।  আপনি সময়ের  মাধ্যমে  টাকা  উপার্জন  করতেছেন  আর  এটাই  সুদ । 
কিন্তু  ইসলামী  ব্যাংক  বলে,  নাহএখানে  কোন  দীর্ঘমেয়াদী  লোন  নাই.এটা  মুরাবাহা । 
মুরাবাহা ?  মুরাবাহা  হলো  যাতে  ক্রেতা  এবং  বিক্রিতা  বর্দ্ধিত  মূল্যের  ব্যাপারে  সন্তুষ্ট / একমত  থাকে ।  না,  এটা  মুরাবাহা  নয়,  এটা  পেছনের  দরজার  সুদ ।  তারা  আপনাকে  সামনের  দরজা  দিয়ে  ধরতে  পারে নাই,  কাজেই  পেছনের  দরজা  দিয়ে  পাকড়াও  করেছে । বর্তমানে  সারাবিশ্বের  তথাকথিত  ইসলামী  ব্যাংকগুলি  মুরাবাহার  মাধ্যমে  পণ্য  বিক্রি  করতেছে  এবং  বলতেছে  এটা  হালাল ।  আর  একে  হালাল  বলার  মতো  মুফতির  অভাব  নাই । আপনার  যদি  একে  ভালো  মনে  হয়,  আপনাকে  ঠেকানোর  জন্য  আমাকে  নিয়োগ  দেওয়া  হয়  নাই ।  কিন্তু  যারা  বুঝতে  পারেন  যে,  এটা  পেছনের  দরজার  সুদ,  তাদের  উচিত  একে  বর্জন  করা ।  তারপর  আরেকটি  বিখ্যাত  পদ্ধতি  আছে,  তা  হলো  সুদকে  গোপন  করা ।  যাকে  বলা  হয়  সাদাসিদা  ভাড়া / রেন্টাল / লিজিং  চুক্তি  এবং  তাতে  সুদকে  কৌশলে  ভাড়ার  ভিতরে  ঢুকিয়ে  দেওয়া  হয় । কাজেই  নিজেকে  এসব  প্রতারনার  ফাঁদে  পতিত  হতে  দেওয়া  উচিত  নয় ।  আমরা  যদি  এসব  করতে  থাকি,  যদি  সুদে  ঋণ  নেই,  সুদে  ঋণ  দেই,  ফিক্সড  ডিপোজিটে  টাকা  রাখি  তবে  তার  শাস্তি  কি ?  এই  ব্যাপারে  শেষ  একটি  হাদিস  বলি । আমাদের  উপর  তাহার  ফলাফল  কি  হবে  ?  এটি  একটি  সহি  হাদিস ।  রাসুলুল্লাহ (সাঃ)  এদের  তাদের  চারজনকেই  অভিসম্পাত  করিয়াছেন ।  যে  সুদ  নেয়,  যে  সুদ  দেয়,  যে  সুদের  দলিল  লিখে  এবং  যে  সুদের  সাক্ষী  থাকে ।  তিনি  বলেছেন,  তাদের  সকলেই  সমান  অপরাধী ।  তারা  যদি  সকলেই  সমভাবে  অপরাধী  হয়,  তবে  তাদের  শাস্তি  কি ?  তার  শাস্তি  কি  যে  সুদ  খায় ? 
কোরআনের  সর্বশেষ  অবতীর্ন  আয়াতে  তার  উল্লেখ  আছে । তাহারা  জাহান্নামের  আগুনে  প্রবেশ  করিবে (আল  কোরআন ২ঃ২৭৫) । কেবল  দোযখে  যাইবে  না,  সেখানে  অনন্তকাল  বসবাস  করবে । সেখানে  চিরকাল  অবস্থান  করবে (আল  কোরআন ২ঃ২৭৫) । এটি  হইল  যারা  সুদ  খায়,  তাদের  শাস্তি ।  কিন্তু  যে  সুদ  দেয়,  তার  শাস্তি  কি ?  যে  বাড়ি  ক্রয়  করার  জন্য  সুদে  ঋন  নিয়েছে ?  আমার  লেকচারের  পরও  তার  বোধশক্তি  ফিরে  আসে  নাই ।  সে  বাড়ি  গিয়ে  স্ত্রীকে  বলে  নাই  যে,  আমরা  একটি  মহাপাপ  করেছি ।  ইহা  থেকে  আমাদের  বেরিয়ে  আসতেই  হবে ।  আমাদের  অবশ্যই  তওবা  করতে  হবে ।  বরং  তারপরও  সে  ব্যাংকের  সুদ  দেওয়ার  জন্য  প্রতি  মাসে  চেক  লিখে  যাইতেছে ।  নবীজি  (সাঃ)  বলেছেন,  তার  পাপ  যে  সুদ  খায়  তার  সমান ।  অন্যদিকে  তার  অবস্থা  কি  হবে  যে  ব্যাংকে  চাকরি  করে  এবং  সুদের  দলিল  লিখে ?  তার  অপরাধও  তার  সমান  যে  সুদ  খায় ।  আর  তার  অবস্থা  কি  হবে  যে  সুদের  লেনদেনে  সাক্ষী  থাকে ?  সেও  সমান  পাপী  যে  সুদ  খায়  তার  মতো ।  সুতরাং  চারজনের  অপরাধ  যদি  সমান  হয়,  তবে  তাদের  শাস্তিও  সমান  হবে । তাহারা  জাহান্নামের  আগুনে  প্রবেশ  করিবে  এবং  সেখানে  অবস্থান  করবে  চিরকাল (আল  কোরআন ২ঃ২৭৫) ।  পরিশেষে  মহান আল্লাহর  নিকট  আমাদের  প্রার্থনা  তিনি  যেন  আমাদের  প্রতি  দয়ার  দৃষ্টি  নিক্ষেপ করেন,  যাতে  আমরা  বিষয়টি  অনুধাবন  করতে  পারি ।  তিনি  যেন  আমাদের  তওবাহ  কবুল  করেন  এবং  অতীতের  সকল  অপরাধ  ক্ষমা  করেন । তিনি  যেন  আমাদের  প্রতি  দয়ার  দৃষ্টিতে  তাকান,  যাতে  আমরা  সুদমুক্ত  জীবনযাপন  করতে  সক্ষম  হই ।  আমিন !
-মাওলানা ইমরান নযর হোসেন
“ইসলামী ব্যাংকের কলাকৌশল মারাত্মক” লেকচার থেকে নেয়া।
অনুবাদ: ডাঃ  বশীর  মাহমুদ  ইলিয়াস

No comments:

Post a Comment